মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক
মাশরুম খাওয়ায় আগে মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক জানতেই হবে। কারণ সঠিক উপায়ে মাশরুম না খেলে মাশরুমের সম্পুর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে না। মাশরুমের ক্ষতিকর দিক না জানলে আমরা অতিরিক্ত মাশরুম খেয়ে ফেলবো। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
আমাদের মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক জানতে হবে। তাই এই আর্টিকেলে মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক নিয়েও আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচিপত্র:মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম অনেকের জানার আগ্রহ। সঠিক নিয়মে মাশরুম খেলে অনেক উপকার হয়। আমরা অনেকেই মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জানি না। যার ফলে মাশরুম খেলে আমরা সম্পন্ন পুষ্টিগুণ পাইনা এবং আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হয়।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম মেনে মাশরুম খেলে মাশরুমের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে শোষিত হয়। তাহলে চলুন মাশরুম খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক:
প্রথমে জনপ্রিয় এবং খাওয়ার উপযোগী মাশরুম নির্ধারণ করতে হবে। এরপর মাশরুম দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মাশরুম ভালোভাবে সম্পন্ন সিদ্ধ করে রান্না করা উচিত। অন্যথায় সম্পূর্ণ রান্না না হওয়া মাশরুম খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
মাশরুম হালকা তেল ও মসলা দিয়ে রান্না করা উচিত। অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করলে মাশরুমের পুষ্টিগুণ কমে যায়। মাশরুমের সালাদ, মাশরুমের স্যুপ, মাসুমের নুডুলস অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও মাশরুমের পাউডার তৈরি করে এটি বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। আশা করি আপনি মাশরুম খাওয়ার নিয়ম বুঝতে পেরেছেন।
মাশরুম খেলে কি হয়?
মাশরুম এক ধরনের ফাঙ্গাস। মাইকেলিয়াম নামক ছত্রাকের শাখা প্রশাখা থেকে মাশরুমের জন্ম। কিছু মাশরুম রয়েছে যেগুলো খাওয়া যায় আবার কিছু মাশরুম হয়েছে যেগুলো বিষাক্ত এবং অখাদ্য। মাশরুম বন জঙ্গলে জন্মায় এবং চাষ করা যায়। মাশরুমে ক্লোরোফিল থাকে না বিধায় মাশরুম সবুজ হয় না এবং ফটোসিন্থেসিস ওকে খাদ্য তৈরি করে না। মাশরুম অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও উপকারী খাদ্য।
মাশরুম খেলে কি হয়? সর্ব সাধারণের প্রশ্ন। কারণ দিনে দিনে মাশরুম খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাশরুম খেলে অনেক উপকার হয়। শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অভাব দূর হয়। মাশরুম খেলে কি হয়? সেটা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- মাশরুম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- মাশরুম খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
- মাশরুম খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- মাশরুম খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- মাশরুম খেলে আমাদের হজম শক্তি উন্নত হয়।
- মাশরুম খেলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ হয়।
- মাশরুম খেলে আমাদের ট্রেস ও উদ্বেগ কমে যায়।
- মাশরুম খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
মাশরুমের বীজ উৎপাদন
ল্যাবটারিতে শুধুমাত্র দুইটি উপায়ে মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা যায়। মাশরুমের বীজ উৎপাদন এর দুটি উপায় হচ্ছেঃ
- টিস্যু কালচার পদ্ধতি।
- স্পোর কালচার পদ্ধতি।
মাশরুমের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে টিস্যু কালচার পদ্ধতি বেশি জনপ্রিয়। কারণ টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ সুস্থ মাশরুমের বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে মাশরুমের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে রোগমুক্ত মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা হয়।
মাশরুম চাষের উপায়
বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুযায়ী সে দেশে বিভিন্ন রকমের মাশরুম চাষ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী বাংলাদেশে চাষের উপযুক্ত মাশরুম হচ্ছে ওয়েস্টার মাশরুম, মিল্কি মাশরুম, প্যাডি স্ট্র মাশরুম। বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে সময় দিচ্ছে। কারণ মাশরুম এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আপনিও চাইলে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে পারেন। ঘরে বসে মাশরুম চাষ করার জন্য মাশরুম চাষের উপায় জানতে হবে। মাশরুম চাষের উপায় না জানলে মাশরুম চাষ করা সম্ভব নয়। তাহলে চলুন মাশরুম চাষের উপায় জেনে নেওয়া যাকঃ
মাসুম চাষের জন্য স্বাগতম প্রয়োজন মাশরুমের বীজ, পলিথিন এবং খর। প্রথমে খড় গুলোকে বিশ মিনিট গরম পানিতে ফুটিয়ে অথবা ব্লিচিং পাউডারের মিশ্রণে ডুবিয়ে চব্বিশ ঘন্টা রেখে জীবনমুক্ত করে নিতে হবে। এরপর একটি পলিথিনের ব্যাগে এক ইঞ্চি পরিমাণ উঁচু করে খড় রাখতে হবে। ঘরের উপরে মাশরুমের বীজ ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
এরপর পুনরায় খড় দিয়ে তার ওপর আবার মাশরুমের বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। এরকম করে ছয় থেকে সাতটি লেয়ার তৈরি করতে হবে একই পলিথিন ব্যাগের মধ্যে। এরপর পলিথিন ব্যাগে ছিদ্র করে তুলা দিয়ে যে ছিদ্র গুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর পলিথিনের ব্যাগগুলো এরকম অন্ধকার স্থানে রাখতে হবে। কিছুদিন পর সেখানে মাইসেলিয়াম জন্ম নিবে। এরপর ব্যাগ গুলো হাল্কা আলো যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। ২৫ থেকে ৩০ দিন পর সেখানে মাশরুমের জন্ম হবে।
আশা করছি আপনি মাসুদ দাসের উপায় বুঝতে পেরেছেন।
মাশরুমের ক্ষতিকর দিক
মাশরুম অত্যন্ত ও স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য। মাশরুম অনেক প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। মাশরুমে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ভালো কলেস্টরের, লো ক্যালোরি ইত্যাদি। এত পুষ্টিকর তাই বলে যে অনেক মাশরুম খাবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। মাশরুমের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। নিচে মাশরুমের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলোঃ
- মাশরুমের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে এর মধ্যে কিছু প্রজাতি বিষাক্ত। এ বিষাক্তপুর জাতির মাশরুম খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সহ মৃত্যু হতে পারে।
- মাশরুমে বিভিন্ন রকম উপাদান রয়েছে। তাই মাশরুম কারো কারো জন্য এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- মাশরুম সঠিকভাবে রান্না না করলে, মাশরুম খাওয়ার ফলে অনেকের হজমে সমস্যা হতে পারে।
- মাশরুম সঠিকভাবে সংরক্ষণ অথবা রান্না না করলে মাশরুমে ছত্রাক থেকে যেতে পারে। যার ফলে আমাদের ফুড পয়জনিং হতে পারে।
মাশরুমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মাশরুমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে অনেকই মাশরুম চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে চাচ্ছেন। মাশরুম অনেক পুষ্টি গুন সম্পন্ন হওয়ায় এর দাম অনেক বেশি। আবার মাশরুম চাষের পদ্ধতি খুব জটিল নয়।তাই মাশরুম চাষ করে অনেকই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০ থেকে ৪১ হাজার টন মাশরুম উৎপন্ন হয়। ৪০ থেকে ৪১ হাজার টন মাশরুম বাজার জাত করার ফলে দেশের অর্থনীতিতে ৮০০ কোটি টাকা যুক্ত হয়। অনেক তরুণ মাশরুম চাষ করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আবার মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
মাশরুমের প্রকারভেদ জেনে নিন
মাশরুমের বিভিন্ন প্রজাতি বেসিডিওমাইকোটা ও অ্যাসকোমাইকোটা শ্রেণীর ফাঙ্গাসের অন্তর্ভুক্ত। তবে কিছু মাশরুম হয়েছে যেগুলো খাওয়া উচিত নয় কারণ এগুলো বিষাক্ত হয়। মাশরুমের প্রকারভেদ অনেক। তার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের মাশরুম খাওয়ার উপযুক্ত। নিচে মাশরুমের প্রকারভেদ তুলে ধরা হলো:
- বাটন মাশরুম: বাটন মাশরুম সবচেয়ে সহজ লভ্য মাশরুম।
- শিটাকে মাশরুম: শিটাকে মাশরুম এশিয়ায় অনেক জনপ্রিয়। শিটাকে মাশরুমের স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো।
- ওয়েস্টার মাশরুম: ওয়েস্টার মাশরুমের স্বাদ মিস্টি। এই মাশরুমের স্যুপ অনেক জনপ্রিয়।
- পোর্টাবেলো মাশরুম: পোর্টাবেলো মাশরুম মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা যেতে পারে। এই মাশরুমের গ্রিল অনেক সুস্বাদু।
- এনোকি মাশরুম: এই মাশরুম সরু, লম্বা এবং সাদা রঙ্গের। এনোকি মাশরুম সালাদে ব্যবহার করা হয়। আরও অনেক প্রকারের মাশরুম রয়েছে।
খাওয়ার উপযোগী মাশরুম তালিকা
অনেকেই খাওয়ার উপযোগী মাশরুম তালিকা জানতে চান।মাশরুম এক ধরনের ফাঙ্গাস। মাইকেলিয়াম নামক ছত্রাকের শাখা প্রশাখা থেকে মাশরুমের জন্ম। কিছু মাশরুম রয়েছে যেগুলো খাওয়া যায় আবার কিছু মাশরুম হয়েছে যেগুলো বিষাক্ত এবং অখাদ্য। মাশরুম বন জঙ্গলে জন্মায় এবং চাষ করা যায়। মাশরুমে ক্লোরোফিল থাকে না বিধায় মাশরুম সবুজ হয় না এবং ফটোসিন্থেসিস ওকে খাদ্য তৈরি করে না।
সব মাশরুম খাওয়ার উপযোগী নয়। কিছু মাশরুম রয়েছে যেগুলো বিষাক্ত এবং মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এইজন্য খাওয়ার উপযোগী মাশরুম তালিকা জানা প্রায়োজন। নিচে খাওয়ার উপযোগী মাশরুম তালিকা তুলে ধরা হলোঃ
- বাটন মাশরুম
- ওয়েস্টার মাশরুম
- কান মাশরুম
- রেইশি মাশরুম
- এনোকি মাশরুম
- শিটাকে মাশরুম
- পোর্টাবেলো মাশরুম
- লায়ন্স মেইন মাশরুম; ইত্যাদী
(FAQs) মাশরুম সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: মাশরুম আর ব্যাঙের ছাতা কি একই জিনিস?
- না, মাশরুম আর ব্যাঙের ছাতা একই জিনিস না। ব্যাঙের ছাতা খাওয়ার উপযোগী নয় অন্যদিকে মাশরুম খাওয়ার উপযোগী।
প্রশ্ন: মাশরুম খেলে কি অ্যালার্জি সমস্যা হয়?
- অনেকের মাশরুম খেলে রাজি সমস্যা হয়। এটি সম্পূর্ণ আপনার শরীরের ধরণের উপর নির্ভর করছে।
প্রশ্ন: মাশরুম চাষ করা কি লাভজনক?
- হ্যাঁ , মাশরুম চাষ করা লাভজনক। কারণ মাশরুম চাষের জন্য নির্দিষ্ট জমির প্রয়োজন হয় না।
প্রশ্ন: মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ কিভাবে নেওয়া যায়?
- বিভিন্ন উপজেলায় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আবার আপনি চাইলে অনলাইনে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।
প্রশ্ন: শিশুদের প্রতিদিনের খাবারের মাশরুম দেওয়া যাবে?
- হ্যাঁ, শিশুদের প্রতিদিনের খাবারের মাশরুম দেওয়া যাবে।
লেখকের শেষ কথাঃ মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক
আমারা অনেকেই মাশরুম বিষাক্ত খাবার ভেবে খায়না। তবে সব মাশরুম বিষাক্ত হয় না। আশা করি আজকের আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনি মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা - মাশরুমের পুষ্টিগুণ জানতে পেরেছেন। আর্টিকেল টি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে তাদের মাশরুম খাওয়ার নিয়ম - মাশরুমের ক্ষতিকর দিক জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ সম্পুর্ণ আর্টিকেল পড়ার জন্য।
আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url