তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম
এখন আপনি জানবেন তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম সম্পর্কে। তিসি খাওয়া স্বাস্থ্যের অনেক উপকারী। তিসি গুরা করেই বেশিরভাগ সময় খাওয়া হয়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্র:তিসি খাওয়ার নিয়ম এবং তিসি গুড়া করার নিয়ম
তিসি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
তিসি সঠিক উপায়ে খেতে হবে। নাহলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: বমি বমি ভাব, রাস, পেটের সমস্যা। তাই তিসি খাওয়ার নিয়ম জানা জরুরি। প্রতিদিনের খাবারে তিসি রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা
বর্তমানে পুষ্টিকর, ভেজাল মুক্ত খবর পাওয়ায় মুশকিল। তাই ঘরের খাবার খেতে হবে। ঘরের খাবারের পুষ্টিগুণ আরও বাড়ানোর জন্যে প্রতিদিন তিসি খাওয়া যেতে পারে। তিসি খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
প্রথমে ভালো, পুষ্ঠ তিসি বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর তিসি বীজ গুলো ফ্রাই প্যানে একটু ভেজে নিতে হবে। এই ভেজে নেওয়া তিসি বীজ গুলো কাচের বোয়ামে সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর, যখন খাবার খাবেন তখন খাবারের সাথে অথবা সালাদের সাথে তিসি মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত ৩ মাস এভাবে তিসি খেলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
চুলের যত্নে তিসির ব্যবহার
বর্তমানে ভাল, স্বাস্থ্যকর, সুন্দর চুলের জন্য মানুষ কত কিছুই না করছে। চুলের যত্নে মানুষের প্রথম পছন্দ থাকে ঘরোয়া উপায়। আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্নে তিসির ব্যবহার করতে পারবেন। চুলের জন্য তিসি অনেক উপকারী।
তিসিতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, প্রোটিন এ উপাদান গুলো চুলের জন্য উপকারী। তিসি দ্বারা তৈরি তেল মাথায় ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই চুলের যত্নে তিসির ব্যবহার করা উত্তম একটি পন্থা। চলুন চুলের যত্নে তিসির ব্যবহার জেনে নেওয়া যাক:
তিসির দিয়ে তৈরি জেলঃ
- মাথায় তিসির দিয়ে তৈরি জেল ব্যবহার করলে চুলের যত্ন উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। জেল তৈরী করার জন্য: তিসির গুড়ার সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশাতে হবে। এরপর এই জেল টি মাথায় ব্যবহার করতে হবে।
তিসির তেলঃ
- তিসির তেল তৈরি করে মাথায় ব্যবহার করা যায়। এতে চুল পুষ্ট হয়, চুলের ফলিকল মজবুত হয়।
তিসির হেয়ার মাস্কঃ
- এক চামচ তিসির গুড়া ও এক চামচ নারিকেল তেল একত্রে মিশিয়ে তিসির হেয়ার মাস্ক তৈরি করা হয়। তিসির হেয়ার মাস্ক মাথায় লাগিয়ে মাথা মেসেজ করতে হবে এবং অন্তত 20 মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
তিসির তেলের উপকারিতা
তিসির তেল মাথায়, মুখে সহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা যায়। কারণ তিসির তেল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তিসির তেল বাজারে কিনতে পাওয়া যায় আবার ঘরে তৈরি করা যায়। সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়ায় জন্য অনেকেই তিসির তেল ব্যবহার করেন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ঠোঁট গোলাপি করার উপায়
তিসির তেলের উপকারিতা অনেক তাই দিন দিন এর জনপ্রিয়তা ও বি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিসির তেলে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, প্রোটিন এ উপাদান গুলো চুলের জন্য উপকারী। তিসি দ্বারা তৈরি তেল মাথায় ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিসির তেলের উপকারিতা নিম্নরূপ:
- তিসিতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের চুলের বৃদ্ধি হয়।
- তিসি চুলের গোড়া মজবুত করতে সহায়তা করে। তার ফলে আমাদের চুল পড়ার হার কমে যায়।
- তিসিতে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- তিসি মাথার স্ক্যাল্পের আদ্রতা বজায় রাখে এবং মাথার খুশকি কমাতে সহায়তা করে।
- তিসি প্রাকৃতিক চুলের কন্ডিশনার। তাই তিসি আমাদের চুলকে নরম মসৃণ রাখে।
- তিসিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে মেরামত করে।
- অনেকের ত্বকে বলিরেখা পড়ে। বলিরেখার কারণে বয়সের আগে মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায়। নিয়মিত তিসির তেল ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা কমে যাবে।
- মসৃণ ত্বক কে না চাই। তবে বেশিরভাগ মানুষের ত্বক রুক্ষ। তিসি তে আন্টি ইনফ্লেমেন্টারি বিদ্যমান। তাই তিসির তেল শুষ্ক ত্বককে গভীর থেকে ময়শ্চারাইজ করে। যার ফলে ত্বক মসৃণ হয়।
- তিসির তেলে আলফা লাইনোলিক এসিড বিদ্যমান। আলফা লাইনোলিক এসিড ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করো। তাই তিসি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
- ত্বকের ফলা ভাব কমাতে তিসি সাহায্য করে।
- রাশ, এলার্জির সমস্যা, ঘাম জনিত সমস্যার সমাধানে তিসি বেশ কার্যকরী।
- ত্বকের সুস্থতার জন্য ত্বকের ভিতরের কোষ গুলোকে সুস্থ থাকতে হবে। তিসি ত্বকের ভেতরের কোষ গুলোকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- তিসি ব্যবহার করলে ত্বকের ডেড সেল ও অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
- ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে তিসি বেশ উপকারী।
- তিসি তে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে তাই তিসি ব্রণের সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
- তিসি মুখের কালো কালো দাগ দূর করে।
- আন্টি অক্সিডেটিভ প্রপার্টিজ থাকে যা ত্বকে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।
তিসি মুখে দিলে কি হয়?
মুখের ত্বক অনেক সংবেদনশীল। সব ধরনের উপাদান মুখে দেওয়া যায় না। কিন্তু তিসি মুখের জন্য অনেক উপকারী এবং এতে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই তিসি মুখে দিলে মুখের ত্বকের কোষগুলো সজীব হয় এবং মুখে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
তিসিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেন্টারি উপাদান যা আমাদের ত্বককে ফ্রি রেডিকেল হতে রক্ষা করে। তিসি মুখে দিলে মুখের ব্রণের সমস্যা দূর হয়। মুখের কালো কালো ছোপ দাগ দূর করার জন্য মুখে তিসি ব্যবহার করা যেতে পারে। মসৃণ ত্বক সবাই চাই। মুসলিম ত্বক পেতে হলে তিসির তেল মুখে দিতে হবে। কারণ তিসির তেল ত্বকের কোষগুলোকে ভিতর থেকে মশ্চারাইজ করে।
আরো পড়ুনঃ আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়
তিসি মুখে দিলে মুখের জ্বালা পোড়া ভাব, ইনফেকশন, রাশ দূর হয়। মুখে বলিরেখা পড়লে তিসি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। তিসিতে আন্টি অক্সিডেটিভ প্রপার্টিজ থাকে যা ত্বকে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। তিসি ব্যবহার করলে মুখের ত্বকের ডেড সেল ও অতিরিক্ত তেল দূর হয়। মুখের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে তিসি বেশ উপকারী।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে তিসি মুখে দিলে কি হয় ।
তিসি বীজ কোথায় পাওয়া যায়?
তিসির এত গুনাগুন জানার পর অবশ্যই আপনি জানতে চাইবেন যে তিসি বীজ কোথায় পাওয়া যায়? বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে তিসি চাষ এবং বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশের বড় বড় বাজারগুলোতে , মুদি দোকানে তিসির বীজ অবশ্যই পাওয়া যাবে। বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে তিসির বীজ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে বেশ কিছু বড় বাজার রয়েছে যেগুলোতে তিসির বীজ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন:
- ঢাকার কারওয়ান বাজার
- চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার
- রাজশাহীর সাহেব বাজার
- বগুড়ার সাতমাথা বাজার
- খুলনার দৌলতপুর বাজার।
তারাও বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে যেখানে আপনি তিসির বীজ পাবেন। যেমন:
- দারাজ
- এমাজন
- ফ্লিপকার্ট
- আলিবাবা
- Parmeeda.com ; ইত্যাদী।
তিসি গুড়া করার নিয়ম
তিসি গুড়া করে খাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে তিসির গুড়া তৈরি করতে হবে। তিসির গুড়া খেলে আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো, থাকে মেজাজ ফুরফুরে থাকে। তিসির গুড়া বাড়ীতে তৈরি করা যায় আবার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
আজকে আমরা তিসি গুড়া করার নিয়ম জানবো। তিসি দানা জাতীয় ফসল তাই এর গুড়া করা সহজ বিষয়। চলুন তাহলে তিসি গুড়া করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক:
প্রথমে ভালো, পুষ্ট তিসির বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর তিসির বীজ গুলো জীবাণু মুক্ত করার জন্য ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিচ্ছন্ন বীজগুলো রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। তিসির বীজ ভালোভাবে শুকানো হলে এর থেকে বেশি তেল পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব?
শুকনো বীজ গুলো তাওয়ায় হালকা ভেজে নিতে হবে। এরপর বীজ গুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে। এর পর তৈরি হয়ে যাবে তিসির গুড়া। এই গুড়া আপনি কাচের ব্যায়ামের দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন। আশা করছি আপনি তিসি গুড়া করার নিয়ম জেনে উপকৃত হয়েছেন।
তিসি গুড়া খাওয়ার নিয়ম
তিসি গুড়া খাওয়ার নিয়ম জানা জরুরি। কারণ বেশি পরিমান তিসির গুড়া খেলে ডায়রিয়া ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তিসির গুড়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। কারণ এতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তিসি গুড়া খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
- প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ার পূর্বে একগ্লাস পানির সাথে এক চামচ তিসি গুড়া মিশিয়ে খাওয়া যাবে।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে একগ্লাস পানির সাথে এক চামচ তিসি গুড়া মিশিয়ে খাওয়া যাবে।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা ১ গ্লাস পানিতে ২ চামচ তিসি গুড়া মিশিয়ে খাবেন, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
তিসি গুড়া সকালে ন খেয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া বেশি উত্তম। দিনে একবারের বেশি তিসি গুড়া খাওয়া যাবে না। যাদের জটিল কোনো রোগ আছে তারা তিসি গুড়া খাওয়া হতে বিরত থাকবেন।
FAQs: তিসির তেল সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: তিসি ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার উপযোগী কি?
- উত্তর: হ্যাঁ,তিসি ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার উপযোগী। তবে কি পরিমান তিসি খাওয়ানো হচ্ছে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন: গর্ভবতী মহিলারা বেশি খেতে পারবেন কি?
- উত্তর: হ্যাঁ, গর্ভবতী মহিলারা বেশি খেতে পারবেন। কারণ তিসি অনেক পুষ্টিকর খাবার। তবে অবশ্যই পরিমিত খাবেন।
প্রশ্ন: বাদামি নাকি হলুদ কোন তিসি ভালো?
- উত্তর: বাদামি এবং হলুদ (সোনালি) উভয় তিসি ভালো। রং আলাদা হলেও পুষ্টিগুণ একই।
প্রশ্ন: তিসি গুঁড়ার দাম কত?
- উত্তর: ১৫০ গ্রাম তিসি গুঁড়ার দাম ২০০ টাকা।
প্রশ্ন: তিসির তেল নিয়মিত চুলে ব্যবহার করা যাবে কি?
- উত্তর: তিসির তেল নিয়মিত চুলে ব্যবহার করা যায়। তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করবেন এবং চুল পরিষ্কার রাখবেন।
লেখকের শেষ কথাঃ তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম
তিসি খাওয়া অথবা ব্যবহার করার আগে তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ না জানলে তিসি খাবেন অথবা গুড়া করবেন কীভাবে! তাই তাই এই আর্টিকেলে অন্যান্য তথ্যের সাথে তিসি খাওয়ার নিয়ম - তিসি গুড়া করার নিয়ম সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আশা রাখছি এই নিয়ম গুলো আপনার অবশ্যই কাজে লাগবে।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান। ধন্যবাদ।
আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url