নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি

নিম গাছ খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ। নিম গাছের বিভিন্ন অংশের মধ্যে নিমপাতা বহুল ব্যবহৃত। মানবজাতি প্রাচীনকাল থেকে তাদের বিভিন্ন কাজে নিম পাতা ব্যবহার করে আসছে। আপনি যদি নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি না? এ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি
আজকের আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি না?
পোস্ট সূচিপত্র:নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি

নিম পাতা সংরক্ষণের উপায়

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিমপাতা কে জাদুকরী পাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। অসংখ্য গুনে গুণান্বিত এই নিম পাতা। আমার বিভিন্ন কাজে নিমপাতা ব্যবহার করি। তাই নিম পাতা সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। নিম পাতার সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিম পাতায় সংরক্ষণের উপায় জানতে আমার সাথেই থাকুন। বিভিন্ন উপায়ে নিমপাতা সংরক্ষণ করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে ভুল পদ্ধতিতে নিম পাতা সংরক্ষণের জন্য নিম পাতা নষ্ট হয়ে যায়। যারা শহরে বসবাস করে তাদের জন্য নিয়মিত নিমপাতা সংগ্রহ করা কষ্টকর। তাই তারা নিমপাতা সংরক্ষণের উপায় খুঁজে। গ্রামের ক্ষেত্রেও নিম গাছ দিন দিন কমে আসছে। যেহেতু মেবাতা খুবই উপকারী একটি পদার্থ তাই এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। নিচে নিমপাতা সংরক্ষণের উপায় তুলে ধরা হলো:
  • নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে: নিমপাতা সংগ্রহ করে সেটি সুন্দরভাবে পরিষ্কার করার পর ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা হাতে পিষে নিম পাতার পেস্ট তৈরি করা যায়। এ নিম পাতার পেস্ট অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
  • নিম পাতার রস তৈরি করে: নিম গাছ হতে নিম পাতা সংগ্রহ করার পর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে অথবা পিষতে হবে। তারপর যে পেস্ট তৈরি হবে এটি পানির সাথে মিশিয়ে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার যে নিম পাতা ও পানির মিশ্রণ পাওয়া যাবে সেটি বোতলজাত করে ফ্রিজে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। মনে রাখবেন এ নিম পাতার রস বাহিরের গরম আবহাওয়াতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখা উত্তম,
  • নিম পাতার গুঁড়ো তৈরি করে: কাঁচা নিমপাতা রোদে দিলে মচমচে হয়ে যায়। তারপরে পাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করলে অথবা পিষলে নিম পাতার গুঁড়ো তৈরি হয়। এই নিম পাতার গুড়ো দীর্ঘদিন যেকোন পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়।
  • নিম পাতার তেল তৈরি করে: কাঁচা নিমপাতা রোদে দিলে মচমচে হয়ে যায়। তারপরে পাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করলে অথবা পিষলে নিম পাতার গুঁড়ো তৈরি হয়। নিম পাতার গুড়ো অলিভ অয়েলের সাথে মিশালে নিম পাতার তেল তৈরি হয়। আপনি চাইলে নিম পাতার গুড়ো অন্যান্য তেলের সাথেও মিশাতে পারেন তবে অলিভ অয়েলের সাথে মিশানো উত্তম। নিম পাতার তেল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়।
  • নিম পাতার বড়ি তৈরি করে: নিম পাতার দীর্ঘদিন সংরক্ষণের আরেকটি উপায় হচ্ছে নিম পাতার বড়ি তৈরি করা। নিম পাতা বড়ি তৈরি করার জন্য নিম পাতার ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে তারপর বেটে নিতে হবে। এই বাটা নিম পাতা বড়ির মত গোল গোল আকার দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। ভালোভাবে রোদে শেখানোর পর একটি পাত্রে অনেকদিন যাবত নিমপাতার বড়ি সংরক্ষণ করা যাবে।আশা করি আপনি নিমপাতা সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।

নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতায় বিভিন্ন খনিজ উপাদান, মিনারেল রয়েছে। তাছাড়াও নিমপাতা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ফাঙ্গাল, এন্টি ভাইরাল গুণ বিশিষ্ট। তাই নিম পাতা খাওয়া অনেক উপকারী। নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান হয়।
কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত নই। কাঁচা নিম পাতায় বিভিন্ন ধরনের উপকারি উপাদান থাকে। কাঁচা নিম পাতা চিবিয়ে খেলে নিম পাতার পুষ্টি উপাদান গুলো সরাসরি আমাদের দেহে যায়। নিম পাতার চিবিয়ে খাওয়ার অর্থাৎ কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:
  • দাঁতের জন্য উপকারী: নিমপাতা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ফাঙ্গাল, এন্টি ভাইরাল গুণ বিশিষ্ট হওয়ায় এটি দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। নিম পাতা খাওয়ার ফলে দাঁতে পোকার সমস্যা থাকলে সেটি নির্মূল হয়, দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়, দাঁত শক্ত হয়।
  • ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে: কাঁচা নিমপাতা খাওয়ার ফলে এটি শরীরের সুগার লেভেল কমিয়ে দেয়। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমরা জানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ত্বকের জন্য উপকারী: নিমপাতায় রয়েছে গ্লাইসারাইডস, ভিটামিন সি ও ক্যারোটিনয়েড। গ্লাইসারাইডস ত্বকের সমস্যা নির্মূলে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ও ক্যারোটিনয়েড ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। তাই নিম পাতা চিবিয়ে খেলে ত্বকের কোষ পুনর্জীবিত হয় । কাঁচা নিমপাতা খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
  • বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে: নিমপাতা নিমবিন, মার্জিনিন ও অন্যান্য লেমনোয়েড বিশিষ্ট। যা অ্যান্টি পাইরেটিক ,আন্টি ম্যালেরিয়াল ও আন্টি টিউমার। নিম পাতা চিবিয়ে খেলে জ্বর থাকলে জ্বর কমে যায়। কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার ফলে ম্যালেরিয়া হলে সেটি উপশম হয়।
  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়: প্রতিদিন কাঁচা নিম পাতা চিবিয়ে খেলে পাচন তন্ত্র উন্নত হয়। কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার ফলে হজমের গতি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। অর্থাৎ আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায় যে নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি

না, গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় নিম পাতা না খাওয়াই উত্তম এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। নিম পাতায় বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলী থাকলেও গর্ভকালীন সময়ে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন যৌগ গর্ভপাতের কারণ হয়। আবার গর্ভে থাকা বাচ্চার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান।
গর্ভাবস্থায় অনেক কিছু খাওয়া বারণ থাকে। এ সময় অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভাবস্থায় নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়। নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদানের জন্য গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে না। পেটে বাচ্চা এবং মায়ের উভয়ের ক্ষতি হতে পারে। কেন গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে না সেটি নিচে তুলে ধরা হলো:
  • গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে: নিম পাতায় রয়েছে নিমবিন, আজাদিরাচটিন, নিম্বিডল ইত্যাদি উপাদান। সব উপাদান উপকারী হলেও গর্ভবতী একজন মহিলার জন্য ক্ষতিকর। নিমবিন অতিরিক্ত তিক্ত একটি উপাদান। যা গর্ভ সংকোচনের জন্য দায়ী হয়। আবার আজাদিরাচটিন নিম পাতার অতিভোর্স সক্রিয় একটি উপাদান। যা পোকামাকড় প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে এই একই উপাদান গর্ভ সংকোচন এর কারন বাড়াতে পারে। নিম্বিদল নিম পাতার ফুলে ও পাতায় পাওয়া যায়। যা গর্ভাশয় সংকুচিত করে। অর্থাৎ নিম পাতা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় নিমপাতা খাওয়া যাবেনা।
  • বিষাক্ততা: নিম পাতায় অনেক উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকে। এই বিষাক্ত উপাদান গর্ভে থাকা বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে না।
  • হরমনের পরিবর্তন: নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান আমাদের শরীরের হরমোন পরিবর্তনে সাহায্য করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় হর মনের পরিবর্তন ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় হরমোনের ইমব্যালেন্স হলে বাচ্চা সহ মায়ের ক্ষতি হতে পারে। নিম পাতা হরমোনের ইমব্যালেন্সের। তাই গর্ভাবস্থায় নিমপাতা খাওয়া যাবে না।

নিম পাতা তিতা লাগে কেন

আমরা সবাই জানি নিম পাতার স্বাদ তিতা। কথিত আছে এই তিতা নিমপাতা মুখের স্বাদ ফেরাতে পারে। অনেকেই বলেন মুখে রুচি না থাকলে নিম পাতার রস খাও। তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে নিমপাতা তিতা লাগে কেন? নিম পাতা তিতা হলে কি হবে এই রয়েছে অনেক উপকারী গুণ। নিম পাতার এতো গুণের জন্য দায়ী নিমপাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান।

আবার এই নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদানের কারণেই নিমপাতা তিতা লাগে। নিমপাতা যে কোন গাছেরই হোক না কেন তার স্বাদ তিতাই হয়। কারণ সব ধরনের নিম গাছের পাতায় একই উপাদান থাকে। নিম পাতায় থাকা যেসব উপাদানের কারণে নিমপাতা তিতা লাগে সেই উপাদান গুলো হচ্ছে:
  • নিম্বিডিন
  • নিমবিন
  • ট্রাপিনিয়েড
  • গ্লাইকোসাইড
  • অ্যালকালয়েড
  • ট্যানিন
নিম পাতায় থাকা উপরোক্ত উপাদান গুলোর কারণে নিমপাতা তিতা লাগে। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

লেখক এর শেষ কথা: নিম পাতা সংরক্ষণের উপায় - গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া যাবে কি

যার যেমন প্রয়োজন সে সেভাবে নিমপাতা ব্যবহার করছে। নিম পাতার গুণ বলে শেষ করা যাবে না। আমরা চাইলে আমাদের বাড়ির আশেপাশে একটিবার দুইটি নিম গাছ রোপন করতে পারি। যার ফলে আমরা লাভবান হব।
আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url