নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

আপনি যদি নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যেই। আজকের আর্টিকেল সম্পন্ন পড়ার মাধ্যমে আপনি নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত হবেন।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
প্রকৃতির আশ্চর্য সৃষ্টি নিম পাতাকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যাদু করি পাতা বলা হয়েছে। নিম পাতার রয়েছে অনেক গুনাগুন যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে লাগে। আজ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচিপত্র:নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে নিমপাতা ব্যবহার করে আসছে। হাজার গুনে ভরপুর নিম গাছ। নিম গাছের প্রতিটি অংশই মানবজাতি তাদের কাজে ব্যবহার করছে। তার মধ্যে নিমপাতা অন্যতম। নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। নিম্নে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরা হলো:

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন: নিম পাতার পেস্ট, নিম পাতার রস, নিম পাতার পানি, নিম পাতার বড়ি, নিম পাতার গুড়া ইত্যাদি। নিম পাতার পেস্ট মুখে দিলে ব্রণ দূর হয়, মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ কমে, দাগ দূর হয়। নিম পাতার বড়ি বা নিম পাতার রস খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, পেটের সমস্যা দূর হয়। নিম পাতার রস চুলে দিলে চুলের উপকার হয়। নিমপাতা এমনিতে চিবিয়ে খাওয়া যায় যেটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

নিম পাতার অপকারিতা

হাজারগুণে গুণান্বিত হলেও নিমপাতার কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেমন পৃথিবীর সকল কিছুর ভালো-মন্দ উভয় দিক থাকে তেমনই নিম পাতারও অনেক উপকারিতার সাথে রয়েছে অপকারিতা। যাদের মুখে এলার্জি আছে অনেকক্ষেত্রে নিম পাতার পেস্ট মুখে দেওয়ার কারণে এলার্জি বেড়ে যায়। নিমপাতার রস খাওয়ার ফলে অনেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

নিম পাতার ব্যবহার জেনে নিন

নিম পাতায় রয়েছে ১৩০ টি ঔষধি গুন, তাই বিগত পাঁচ হাজার বছর থেকে ভারতবর্ষে নিমপাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে নিম পাতা ব্যবহার করেন।
  • ত্বকের যত্নে
  • মাথার চুলে
  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে
  • মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে
  • দাঁতের উপকারে
  • হাড়ের ক্ষয় রোধে
  • পোকামাকড় প্রতিরোধে
  • ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে
  • প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটি হিসেবে
  • পেটের সমস্যা নিরাময়ে

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতার ক্ষতিকর দিকের সংখ্যা কম হলেও সেটি অবহেলা করার মত নয়। সবার জন্য নিমপাতা উপকারী নাও হতে পারে। যেমন:
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিমপাতা ক্ষতিকর: নিমপাতা গরম ভাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • বিবাহিত নারী পুরুষ এর জন্য নিম পাতা ক্ষতিকর: বিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য নিমপাতা ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ নিম পাতার তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • যাদের নিম পাতায় এলার্জি রয়েছে: যাদের মুখে বা শরীরে এলার্জি রয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তাদের নিমপাতা ব্যবহার না করাই উত্তম। এটি তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • পাচনতন্ত্রের সমস্যা: নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহারের ফলে গ্যাসের সমস্যা বমির ভাব হতে পারে।
  • রক্তচাপ কমানো: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহারের ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যা দেহের জন্য ক্ষতিকর।

চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

চুলের জন্য অনেক পাতার উপকারিতা র সংখ্যা অনেক। অনেকের চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন: চুল ঝরে পড়া, মাথায় খুশকি, চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা, মাথার স্ক্যাল্পে ছত্রাকের আক্রমণ ইত্যাদি। চুলের সমস্যা নিরাময়ের নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান। যা চুলের জন্য খুবই উপকারী।
নিম পাতার তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি জিনিস। নিম পাতার গুড়া করে অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা দূর। নিমপাতা পেস্ট করে চুলে মাখিয়ে এক ঘন্টা রেখে চুল শ্যাম্পু করলে মাথার খুশকি, চুলে দুর্বলতা, চুলের শুষ্কতা দূর হয়। চুল নরম ও কোমল হয়। সপ্তাহের অন্তত একদিন এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত।

নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই। আর আমরা সবাই জানি চুলের জন্য ভিটামিন ই কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে রয়েছেন বাজার থেকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিনে চুলে ব্যবহার করেন। অথচ আমরা চাইলে বাড়িতে সম্পন্ন ভেজালমুক্ত নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করে চুলের ভিটামিন ই-র প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারি।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্মরোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। রোগের মহা ঔষধ নিমপাতা। যাদেরকে চর্মরোগ রয়েছে তারা একবারের জন্য হলেও নিমপাতা অবশ্যই ব্যবহার করেছেন। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।

নিম পাতার পেস্ট চর্মরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। নিম পাতার গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা চর্মরোগ নিরাময়ের সহায়তা করে। নিম পাতা দিয়ে ফুটানো গরম পানি গোসলের সময় ব্যবহার করলে এলার্জি দূর হয়। ত্বকের যে সকল স্থানে ব্রণ, ফোড়া, একজিমা রয়েছে সেখানে নিমপাতা বেটে লাগালে উপকার হয়।

নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতার রয়েছে অনেক গুনাগুন। নিমপাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তার মধ্যে নিম পাতার বড়ি খাওয়া অন্যতম। নিম পাতার বড়ি তৈরি করার জন্য নিমপাতা বেটে বড়ির মতো তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এই নিম পাতার বড়ি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। নিম পাতার বড়ি সকালে খালি পেটে বা যখন প্রয়োজন তখন খাওয়া যায়।

নিম পাতার বড়ির খাওয়ার উপকারিতা অনেক। যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে , তাদের জন্য ডায়াবেটিকস নিরাময়ে এটি খুবই কার্যকর উপায়। নিয়মিত নিম পাতার বড়ি খেলে ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত হয়। নিম পাতার বড়ি খেলে পাচনতন্ত্র উন্নত হয়, পেটের সমস্যা দূর হয়। নিম পাতার বড়ি খাওয়া নিমপাতার রস তুলনায় সহজ। এক্ষেত্রে মুখে তিতা ভাব কম লাগে। সর্বোপরি নিম পাতার বড়ি অনেক উপকারী।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি মাইক্রোব্রিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিমপাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। নিমপাতা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলো:
  • সরাসরি নিম পাতা খাওয়া : প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাঁচ থেকে ছয়টি নিমপাতা খাওয়া যেতে পারে।
  • নিম পাতা বেটে চিনির সাথে মিশিয়ে খাওয়া: নিমপাতা বেটে চিনির সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে খেলে কাশি উপশম হয়।
  • নিমপাতা গুঁড়ো করে খাওয়া: নিম পাতার শুকিয়ে গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে পানিও হিসেবে খাওয়া যায়।
  • নিমপাতা ভেজে খাওয়া: সর্বোত্তম নিমপাতা খাওয়ার পন্থা হলো নিম পাতা ভেজে খাওয়া। এটি অনেক উপকারী।

নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম

প্রতিদিন কাঁচা নিমপাতা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য। আমাদের দৈনিক জীবনের ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত কাঁচা নিমপাতা খাওয়া হয়ে ওঠেনা। তাই অনেকেই নিমপাতা অনেক দিন ধরে সংগ্রহ করার উপায় খুঁজছেন। তাহলে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নিম পাতার গুঁড়ো করা। নিম পাতার গুঁড়ো অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। যা পানির সাথে মিশিয়ে পান করা যায়।
নিম পাতা গুঁড়ো করার নিয়ম হচ্ছে: প্রথমে কাঁচা নিমপাতা নিয়ে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর সেটি রোদে শুকাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে রোদে শুকানোর সময় নিমপাতা গুলো যেন বৃষ্টির পানিতে ভিজে না যায়। রোদে শুকানোর পর নিমপাতা গুলো পিষে অথবা ব্লেন্ড করে গুঁড়ো তৈরি করা যাবে।

নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার গুড়া তৈরি করার পর প্রশ্ন জাগতে পারে এখন ওই গুঁড়ো খাবো কিভাবে? নিম পাতার গুড়ো খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিমে যেহেতু বিভিন্ন উপাদান রয়েছে তাই এটি যেমন তেমনভাবে খেলে হবে না। নিয়ম মেনে খেতে হবে। শুধু নিম পাতার গুঁড়ো খাওয়া কষ্টকর। এতে মুখে অনেক তিতা ভাব অনুভব হবে।

স্বাস্থ্যগত সুবিধার কারণে নিম পাতার গুড়া খাওয়া হয়, যা খাওয়া অনেক সহজ। নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলো:
  • পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে নিম পাতার গুড়ো খাওয়া। সাধারণত গরম পানির সাথে নিম পাতার গুড়ো মিশিয়ে খাওয়া হয়।
  • সরাসরি নিম পাতার গুড়ো খাওয়া। সকালে খালি পেটে নিম পাতার গুঁড়ো খাওয়া যেতে পারে।
  • তিতা ভাব কমানোর জন্য মধুর সাথে মিশিয়ে নিম পাতার গুড়ো খাওয়া।

লেখকের শেষ কথা: নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিমপাতা কত দুটো উপকারিতা আমাদের সবারই জানা। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নিমপাতা ব্যবহার হয়ে। নিম পাতার রস, নিম পাতার গুড়ো, নিমপাতার পানীয় সবকিছু মানুষ তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিমপাতা আশীর্বাদ স্বরুপ।
আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url