নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় - নিম পাতা কিভাবে খেতে হয়

আমাদের শরীরের জন্য নিমপাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিম পাতার অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। আমাদের ত্বক এবং মুখের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিমপাতা মুখে দিলেন যে সকল উপকার পাওয়া যায় ওই সকল উপকার এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন।
নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় - নিম পাতা কিভাবে খেতে হয়
আজকে আমরা আলোচনা করব নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় - নিমপাতা কিভাবে খেতে হয়। আশা করি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জানা যাক নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় এবং নিমপাতা কিভাবে খেতে হয়।
পোস্ট সূচিপত্র:নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় - নিম পাতা কিভাবে খেতে হয় বিস্তারিত জানুন

নিম পাতার তেতো ভাব কমানোর উপায়

নিম পাতার রয়েছে অবিশ্বাস্য গুণাবলী। মুখে ব্রণের দাগ দূর করা, ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা, চুলের গোড়া শক্ত করা, দাঁতের মাড়ি শক্ত করা, হার শক্ত করা, পাচন তন্ত্রের উন্নতি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমানো, মুখের রুচি বৃদ্ধি ইত্যাদি অনেক কাজে নিম পাতা ব্যবহার হয়। নিম পাতার এতসব উপকারিতা জানার পরেও অনেকে নিমপাতার তিতা ভাব এর কারনে নিম পাতা খেতে চান না বা খেতে পারেন না।
নিমপাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদানের কারণে নিম পাতার স্বাদ তিতা হয়। যারা নিম পাতার তেতো ভাবের জন্য নিমপাতা খেতে পারেন না তারা অবশ্যই নিম পাতার তেতো ভাব কমানোর উপায় খুঁজছেন। নিম পাতার তেতো ভাব একবারে দূর করা সম্ভব নয় তাই নিম পাতার তেতো ভাব কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। নিম পাতার তেতো ভাব কমানোর উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:
  • অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে: নিম পাতা অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখার মাধ্যমে নিম পাতার তেতো ভাব কমানো যায়। নিম পাতা অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর এত ভাব কিছুটা দূর হয়।
  • গরম পানিতে সিদ্ধ করা: গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে নিম পাতার সিদ্ধ করলে এর তেতো ভাব অনেকটা কমে যায়।
  • মিষ্টি জাতীয় জিনিসের সাথে মিশিয়ে খেলে: নিমপাতা মিষ্টি জাতীয় জিনিসের সাথে মিশিয়ে খেলে এতে তো ভাব কমানো যায়। যেমন: মধু, চিনি, মিশ্রি। সবচেয়ে ভালো মধুর সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খাওয়া এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি কম হয়। অর্থাৎ মধু, চিনি, মিশ্রি এসবের সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খেলে নিমপাতার তেতো ভাব কমানো যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খাওয়া: অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খেলে তো ভাব কমানো যায়। যেমন: বেগুন, নিমের ঝোল ইত্যাদী। এভাবে খেলে নিম পাতার তেতো ভাব কমানো যাবে।

নিম পাতা কিভাবে খেতে হয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম গাছকে ২১ শতকের শ্রেষ্ঠ গাছ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র নিম পাতাকে জাদুকরী পাতা বলে। অনেকেই বিভিন্ন রোগের সমাধানে নিম পাতা খান। নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান অনেক রোগের সমাধান করতে সক্ষম।

বিভিন্ন রোগের সমাধানে বিভিন্নভাবে নিম পাতা খেতে হয়। অনেক রোগের সমাধানে একইভাবে নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়। এতে খুব একটা ভালো ফল পাওয়া যায় না। নিম পাতা খেতে হয় নিয়ম মেনে। সপ্তাহের সাত দিনে নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়। এতে কিডনির সমস্যা হয়। বিভিন্নভাবে নিম পাতা খাওয়া যায়। নিমপাতা কিভাবে খেতে হয় নিচে তুলে ধরা হলো:
  • নিম পাতা বেটে পেস্ট করে খাওয়া যেতে পারে।
  • নিম পাতার রস তৈরি করে রস খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • নিম পাতা চিনি মধু ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খেলে কাশি উপশম হয়।
  • প্রতিদিন সকালে পাঁচটি গোলমরিচের সাথে ১০-১২টি নিম পাতা মিশিয়ে পেস্ট করে খেলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অনেক রোগ আপনা আপনিই সেরে যায়।
  • নিম পাতার গুড়া তৈরি করে নিম পাতা খাওয়া যায়। নিম পাতার গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
  • নিম পাতার বড়ি তৈরি করে নিমপাতা খাওয়া যায়। নিম পাতার বড়ি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে অনেক দিন সংরক্ষণ করে নিয়মিত খাওয়া যায়।
উপরোক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আপনি নিম পাতা খেতে পারবেন।

একজিমার জন্য নিম পাতার ব্যবহার

একজিমা হচ্ছে চর্মরোগ। ত্বকের প্রদাহ, ত্বকের লাল লাল ভাব, ফুসকুড়ি, চুলকানি এসব একজিমার কারণে হয়। একজিমা রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য নয় তবে এটি নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। একজিমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ত্বকের যত্ন প্রয়োজন। আরে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে নিমপাতা। অনেকেই একজিমার জন্য নিম পাতার ব্যবহার করেন।
নিম পাতার মাধ্যমে একজিমা চিকিৎসা করলে প্রাকৃতিক উপকার পাওয়া যায়। নিম পাতায় থাকা আন্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং তাদের কোষ উন্নত করে। এসব উপাদান একজিমার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। একজিমার জন্য নিম পাতার ব্যবহার বিভিন্ন রকম হতে পারে নিচে তা তুলে ধরা হলো:
  • নিম পাতার পেস্ট: নিমপাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিম পাতার পেস্ট তৈরি করতে হবে এরপর একজিমা প্রদাহের স্থানে নিম পেস্ট লাগাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট প্রদাহের স্থানে নিম পেস্ট লাগিয়ে রাখার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • নিম পাতার রস খাওয়া: নিম পাতার সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে নিম পাতার পেস্ট তৈরি করতে হবে। নেম পেস্টের সাথে পানি মিশিয়ে নিমপাতার রস তৈরি করতে হবে। এই নিম পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে রক্ত পরিষ্কার হবে। রক্ত পরিষ্কার হলে শরীরে একজিমার সংক্রমণ কমে যাবে।
  • নিম পাতার পানি দিয়ে গোসল: নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানিতে দিয়ে ফুটাতে হবে। তারপর নিম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করতে হবে তাহলে শরীরে একজিমার প্রদাহ কমে যাবে একই সাথে সংক্রমণের হার কমে যাবে।
  • নিম পাতার তেল ব্যবহার: বাজার থেকে নিম পাতার তেল কিনে অথবা ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিম পাতার তেল তৈরি করে একজিমা প্রধান স্থানে মালিশ করতে হবে। এতে একজিমার প্রদাহ কমে যাবে।

গোসলে নিম পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন

নিম পাতার বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। মানুষজন তাদের সমস্যা অনুযায়ী সমাধানের জন্য নিমপাতা ব্যবহার করে। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আন্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল। এসব উপাদান ত্বকের জন্য উপকারী। এসব উপাদান ত্বকের কোষ পুনর্জীবিত এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

অনেকেই গোসলে নিম পাতা ব্যবহার করেন। আবার অনেকেই গোসলে নিম পাতায় ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। কিন্তু বুঝতে পারছেন না গোসলে নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন? চিন্তা নেই সমস্যার সমাধান আছে।
গোসলে নিমপাতা যেভাবে ব্যবহার করবেন: প্রথমে ভালো মানের নিমপাতা সংগ্রহ করবেন। এরপর নিম পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করবেন। পরিষ্কার নিমপাতা গুলো পানির মধ্যে দিয়ে চুলোতে গরম করবেন। পানি গরম হয়ে গেলে নিম পাতাগুলো পানি থেকে ছেঁকে নিবেন। তারপর যে পানি পাবেন সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন। এভাবেই আপনি গোসল নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়

নিম পাতায় রয়েছে অসংখ্য উপকারী উপাদান। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানের জন্য উপকারী। প্রায় আমাদের মুখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ব্রনের সমস্যা, মুখে দাগ, মুখে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস ,মুখে ছোট বড় গর্ত, ত্বকের শুষ্কতা , এলার্জি ইত্যাদি। সকল সমস্যার সমাধানে বাজারজাত পণ্য ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। তাই আমরা অনেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া ভাবে এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই।

মুখের বেশিরভাগ সমস্যার সমাধানে সর্বোত্তম উপায় নিমপাতা। নিম পাতায় রয়েছে ক্লিনজার আন্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান। নিম পাতা বেটে মুখে দিলে মুখের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ত। নিম পাতা পেটে মুখে দিলে মুখে থাকা ব্রনের দাগ দূর হয়, ব্রণের সংক্রমণ কমে যায়, ত্বকের ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস দূর হয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, মুখের ত্বক নরম এবং কোমল হয়, মুখের শুষ্কতা দূর হয়, মুখে ছোট বড় গর্ত পূরণ হয়, মুখের বলি রেখা দুর হয়, মুখের কালচে ভাব কমে যায়।

নিম পাতার ক্লিনজার ব্যবহার করা উত্তম। নিম পাতা ক্লিনজার ব্যবহার করার জন্য গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে সে পানি সবুজ হওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর পানি ঠান্ডা হলে এটা বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। এই ক্লিনজার বিভিন্ন সময়ে মুখে ব্যবহার করা যাবে। নিমপাতা ক্লিনজার ব্যবহার করা হলে মুখের টোন বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি নিম পাতা বেটে মুখে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

দিনে কতটুকু নিম পানি পান করা উচিত

নিম আমাদের শরীর হতে ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে। মিম আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রক্ত পরিষ্কার করে। তাই আমাদের মাঝেমধ্যে নিম পানি পান করা উচিত। তবে নিয়মিত নিম পানি বা নিম পাতা খাওয়া ক্ষতিকর। চিকিৎসকের মাংস ছাড়া দীর্ঘদিন নিম পানি পান করা উচিত নয়। এতে আমাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নিম পানি খালি পেটে পান করা উচিত। দিনে কতটুকু নিম পানি পান করা উচিত এটি আপনার শরীর স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবুও সাধারণত দিনে এক গ্লাস নিম পানি পান করা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

FAQs:

প্রশ্ন: কোন উপায়ে দু থেকে তিন মাস নিমপাতা সংরক্ষণ করা যাবে?
  • কোন কিছুই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা উচিত নয়। এতে উক্ত জিনিসটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। নিম পাতার গুড়া দুধ থেকে তিন মাস সংরক্ষণ করা যাবে।
প্রশ্ন: নিমপাতা বেটে মুখে দিলে ফর্সা হওয়া যাবে?
  • নিমপাতা মেটে মুখে দিলে ফর্সা হওয়া যাবে কিনা এটা নির্দিষ্ট ভাবে বলা মুশকিল। বিভিন্ন মানুষের ত্বক বিভিন্ন রকম। তবে নিমপাতা বেটে মুখে দিলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন: বিবাহিত নারী-পুরষ নিমপাতা খেতে পারবে?
  • বিবাহিতা নারী-পুরুষের নিমপাতা না খাওয়াই উত্তম। যেহেতু নিমপাতা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন: নিম পাতায় ক্যালসিয়াম রয়েছে?
  • হ্যাঁ, নিম পাতায় ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাই নিম পাতা খেলে হার মজবুত হয়।

লেখক এর শেষ কথা: নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা আমাদের শারীরিক জীবনে বাধা সৃষ্টি করে। শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ জনিত সমস্যার সমাধানে আমরা নিম পাতা ব্যবহার করে থাকি। আবার ডায়াবেটিস রোগীরা নিমপাতা ব্যবহার করেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। নারীরা তাদের ত্বকের যত্নে নিমপাতা ব্যবহার করেন।
আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url