চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ চুলের সমস্যায় ভুগছেন। কে না চাই সুন্দর, স্বাস্থ্যকর, মজবুত, উজ্জ্বল চুল। সবাই সুন্দর চুল পেতে আগ্রহী। সুন্দর চুলের জন্য তিসি জাদুকরী উপাদান। তাই অনেকেই চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। এখন চুলের, ত্বকের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
তিসি চুলের জন্য যেমন উপকারি তেমনি ত্বকের, শরীরের জন্য উপকারী। কারণ তিসির পুষ্টিগুণের অভাব নেই। তিসিতে আমাদের ত্বক, চুল, শরীর এসবের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ জানতে হলে আমার সাথেই থাকুন।
পোস্ট সূচিপত্র:চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ
তিসি কি? জেনে নিন
তিসি একধরনের গুল্ম যা তেল ও আঁশ উৎপাদন করে। তিসির ইংরেজি নাম: Flex Seed । তিসির বৈজ্ঞানিক নাম Linum usitatissium. সর্বপ্রথম মিশরে, লিনেন বস্ত্র তৈরি করার সময় তিসি ব্যবহার করা হয়েছিল। তিসি বীজ বাদামি ও হলুদ এই দুই রঙের হয়।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ জেনে নিন
ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসের মধ্যে তিসি পাকে। তিসি পাকার পর তিসির গাছ ও তিসি বীজ কিছুটা তামাটে বা সোনালি রং ধারণ করে। তিসি অনেক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। তিসি চুলের জন্য অনেক উপকারী।
চুলের জন্য তিসির উপকারিতা
জলবায়ু পরিবর্তন, দূষিত আবহাওয়া এসব আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ইত্যাদি আমাদের ত্বকের ও চুলের খুব ক্ষতি করে। বর্তমানে অনেকেই চুলের সমস্যায় ভুগছেন। যেমন: চুল ঝরে পড়া, চুল দুর্বল, মাথায় খুশকি, চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত ইত্যাদি।
চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন উপাদান চুলে ব্যবহার করি। এই উপাদান গুলোর মধ্যে তিসি অন্যতম। চুলের জন্য তিসির উপকারিতা অনেক। তিসিতে বিদ্যমান পুষ্টি প্রদান গুলো আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
তিসিতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, প্রোটিন এ উপাদান গুলো চুলের জন্য উপকারী। তিসি দ্বারা তৈরি তেল মাথায় ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিচে চুলের জন্য তিসির উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
চুলের জন্য তিসির উপকারিতাঃ
- তিসিতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের চুলের বৃদ্ধি হয়।
- তিসি চুলের গোড়া মজবুত করতে সহায়তা করে। তার ফলে আমাদের চুল পড়ার হার কমে যায়।
- তিসিতে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- তিসি মাথার স্ক্যাল্পের আদ্রতা বজায় রাখে এবং মাথার খুশকি কমাতে সহায়তা করে।
- তিসি প্রাকৃতিক চুলের কন্ডিশনার। তাই তিসি আমাদের চুলকে নরম মসৃণ রাখে।
- তিসিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে মেরামত করে।
চুলের জন্য তিসির অপকারিতা
তিসিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি বিদ্যমান। তাই চুলে তিসির অতিরিক্ত ব্যবহারে চুলের জন্য অপকারী। প্রয়োজনের বেশি খাবার খেলে আমাদের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি বেশি পরিমাণ তিসি চুলে ব্যবহার করা অপকারী।
পিসিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের চুলের জন্য যথেষ্ট এর বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আমাদের চুল শোষণ করতে পারবেনা। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ তিসি ব্যবহার করা উচিত। চুলের জন্য তিসির অপকারিতা কম হলেও এড়িয়ে যাবার মত নয়।
আরো পড়ুনঃ জাফরান খাওয়ার নিয়ম
চুলের জন্য তিসির অপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
- তিসি দিয়ে তৈরি তেল মাথায় অতিরিক্ত ব্যবহার করলে চুল ভারি ও তৈলাক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে চুল পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়বে।
- তিসির তেল অথবা তিসির পেস্টে কিছু মানুষের এলার্জি থাকতে পারে। এলার্জি থাকলে মাথার স্ক্যাল্পে চুলকাতে পারে, রাস হতে পারে, জ্বালাপোড়া হতে পারে ।
- তিসির তেল অথবা তিসির পেস্টে মাথায় অনেকক্ষণ রাখলে চুল জমাট বেঁধে যাবে। এরপর চুল ছাড়াতে অনেক কষ্ট হবে।
- অতিরিক্ত তিসির তেল ব্যবহার করলে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
আশা করি আপনি চুলের জন্য তিসির অপকারিতা সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন।
তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
তিসি বা Flaxseed মূলত লিনাম ইউসিটাটিসিমাম জাতীয় খাবার এবং আঁশযুক্ত ফসল। তিসি আলফা লিনোলিক এসিড যুক্ত। ডায়েটরি ফাইবার ও ওমাগো-৩ ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস হিসেবে তিসি বেশ পরিচিত।
তিসির পুষ্টিগুণ অনেক। তাই তিসি কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, বেশি ওজন এসকল রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তিসি ফাইট্রোয়েস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত। তিসির পুষ্টিগুণ অনেক তাই দিন দিন বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তিসির ব্যবহার বাড়ছে।
তাহলে, চলুন তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রতি ২০০ গ্রাম তিসি তে বিদ্যমান:
- শক্তি - ১০৬৮ ক্যালোরি
- শর্করা - ৫৭.৭৬ গ্রাম
- চিনি - ৩ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ - ৫৪.৬ গ্রাম
- স্নেহ পদার্থ - ৮৫.২ গ্রাম
- ওমাগা-৩ - ৪৫.৬ গ্রাম
- ওমাগা-৬ - ১১.৮ গ্রাম
- প্রোটিন - ৩৬.৫৮ গ্রাম
- থায়ামিন - ৩.২৮ মিগ্রা
- রিবোফ্লাভিন - ০.৩২ মিগ্রা
- নায়াসিন - ৭.৬ গ্রাম
- প্যান্টথেনিক এসিড - ১.৯৭ গ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ - ০.৮ গ্রাম
- ফলেট - ১৭৪ মাইক্রো গ্রাম
- ভিটামিন সি - ১.২ মিগ্রা
- ক্যালসিয়াম - ৫১০ মিগ্রা
- আয়রন - ১০.৭৩ মিগ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম - ৭৮৪ মিগ্রা
- ফসফরাস - ১২৮৪ মিগ্রা
- পটাশিয়াম - ১৮২৬ মিগ্রা
- জিংক - ৮.৬৮ মিগ্রা
ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা
ত্বকের জন্য জাদুকরী উপাদান আর তিসি। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন , দূষিত আবহাওয়া এসবের কারণে আমাদের ত্বকের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার আমরা প্রায় সবাই চিন্তিত। কারণ সবাই স্বাস্থ্যকর, সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে চায়।
আরো পড়ুনঃ কলপ ছাড়া পাকা চুল কালো করার উপায়
ত্বকের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে তিসি বেশ উপকারী। তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার পর আপনি অবশ্যই বুঝে গেছেন যে ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা কত। চলুন ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
- অনেকের ত্বকে বলিরেখা পড়ে। বলিরেখার কারণে বয়সের আগে মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায়। নিয়মিত তিসির তেল ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা কমে যাবে।
- মসৃণ ত্বক কে না চাই। তবে বেশিরভাগ মানুষের ত্বক রুক্ষ। তিসি তে আন্টি ইনফ্লেমেন্টারি বিদ্যমান। তাই তিসির তেল শুষ্ক ত্বককে গভীর থেকে ময়শ্চারাইজ করে। যার ফলে ত্বক মসৃণ হয়।
- তিসির তেলে আলফা লাইনোলিক এসিড বিদ্যমান। আলফা লাইনোলিক এসিড ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করো। তাই তিসি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
- ত্বকের ফলা ভাব কমাতে তিসি সাহায্য করে।
- রাশ, এলার্জির সমস্যা, ঘাম জনিত সমস্যার সমাধানে তিসি বেশ কার্যকরী।
- ত্বকের সুস্থতার জন্য ত্বকের ভিতরের কোষ গুলোকে সুস্থ থাকতে হবে। তিসি ত্বকের ভেতরের কোষ গুলোকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- তিসি ব্যবহার করলে ত্বকের ডেড সেল ও অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
- ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে তিসি বেশ উপকারী।
- তিসি তে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে তাই তিসি ব্রণের সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
- তিসি মুখের কালো কালো দাগ দূর করে।
- আন্টি অক্সিডেটিভ প্রপার্টিজ থাকে যা ত্বকে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।
তিসির তেল বানানোর নিয়ম
তিসি দানা জাতীয় ফসল। তাই তিসি ব্যবহার করতে হলে তিসির তেল অথবা তিসির পেষ্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। তবে তিসির পেষ্ট দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই বেশির ভাগ মানুষ তিসির তেল তৈরি করে।
তাই এখন আমরা তিসির তেল বানানোর নিয়ম জানবো। সঠিক ভাবে তিসির তেল বানাতে হলে আপনাকে আগে তিসির তেল বানানোর নিয়ম জেনে নিতে হবে। তিসির তেল ঝামেলা ছাড়াই বানানো সম্ভব।
নিচে তিসির তেল বানানোর নিয়ম তুলে ধরা হলো:
প্রথমে ভালো, পুষ্ট তিসির বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর তিসির বীজ গুলো জীবাণু মুক্ত করার জন্য ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিচ্ছন্ন বীজগুলো রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। তিসির বীজ ভালোভাবে শুকানো হলে এর থেকে বেশি তেল পাওয়া যায়।
শুকনো বীজ গুলো তাওয়ায় হালকা ভেজে নিতে হবে। এরপর বীজ গুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে অথবা পাটায় বেটে নিতে হবে। ব্লেন্ড করার সময় বীজ থেকে তেল বের হওয়া শুরু হবে। এর পর তেল আলাদা ভাবে ছেঁকে নিতে হবে।
ছেঁকে নেওয়া তেল বোতলে সংগ্রহ করে ঠান্ডা ও অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গায় রাখুন। কারণ তিসির তেল সূর্যালোকের আলোয় অক্সিডাইজড হয়ে যায়। এইভাবে আপনি তিসির তেল বানাতে পারবেন।
তিসির তেলের দাম জেনে নিন
তিসি যেমন উপকারি তেমনই ব্যবহারযোগ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিসি ব্যবহার করা যায়। আবার তিসি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। তাই তিসির তেলের দাম কিছুটা বেশীই। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্লাটফর্মে তিসির তেল বিক্রি হয়।
আরো পড়ুনঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল চেনার উপায়
এক লিটার তিসির তেলের দাম প্রায় ১০০০ টাকার মতো। ১০০ গ্রাম তিসির তেল নিতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে প্রায় ১০০ টাকা। একসাথে বেশি পরিমান তিসির তেল নিলে আপনার খরচ কিছুটা কম হবে। যেমন: মাত্র ৪৭০ টাকায় আপনি ৫০০ গ্রাম তিসির তেল পেয়ে যাবেন।
লেখকের শেষ কথাঃ চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ
এই আর্টিকেলে চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চুলে তিসি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আমাদের চুলের জন্য তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা - তিসির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমরা সবাই চাই সুন্দর, মজবুত, স্বাস্থ্যকর অধিকারী হতে। এক্ষেত্রে তিসি আমাদের বেশ উপকার করে।
আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url