আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি বর্ষার সবজি চাষ করবেন কিন্তু আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় এবং পাট চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নাই। তাই অনেক ওয়েবসাইট ঘুরাঘুরি করছে। কিন্তু সঠিক তথ্য খুজে পাচ্ছেন না। তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য আপনি এই পোস্টে জানতে পারবেন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় সম্পর্কে । তাই আমাদের সাথে থাকুন
আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনি জানতে পারবেন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় এবং পাট চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় ও পাট চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে। 
আর্টিকেল সূচিপত্রঃআষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায়

ভূমিকা।আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায়

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে সারাদিন বৃষ্টি হয়। এসময় কৃষকেরা তার বাড়ি থেকে বের হতে পারেনা তাদের সময় কাটে অলসতায়।আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় জেনে নিয়ে সবজি চাষ করতে পারেন।  আবার অনেকে কঠোর প্ররিশ্রম করে বর্ষায় ভিজে। অনেক সময় আষাঢ় -শ্রাবণ বন্যা দেখা দেয়। কারণ নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় এবং আবাদি ও ফসলি জমি সব তলিয়ে যায়।
আবার তাড়াতাড়ি পানি নেমে গেলে জমির পলি থাকে এবং সেই পলি থেকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।এইসময় চাষীরা শাকসবজি, পাট, ধান, আমান ধান,গাছপালা, প্রাণীসম্পদ, মৎস্যসম্পদ এগুলো নিয়ে কি করে চলুন একটু জেনে আসি। আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় জেনে সবজি চাষ করতে পারেন। 

শাকসবজিতে বর্ষার ভূমিকা

বষার সময় শুকনো জায়গার অভাব থাকে। অভাব হলে উপায় তো একটা থাকে সেইটা আমরা অনেকে জানি আবার অনেকে জানি না।আসুন আমরা সবাই একনজরে জানতে পারবেন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় ।

বর্ষার সময় আমরা টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্সে এমনকি পলিথিন ব্যাগে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদনের বাবস্থা গ্রহণ করতে পারি।এই মাসে সবজি বাগানে আমাদের করণীয় কাজ গুলোর মধ্যে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উচু করা, আগাছা পরিস্কার রাখা, গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে লক্ষ রাখা।
গাছের মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা। প্রয়োজনে জৈব সার প্রয়োগ করা। এতে করে তারাতারি ফুল ও ফল আসবে।লতানো সবজি বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ও ধারণ ক্ষমতা বেশি হবে। গাছের বৃদ্ধি পাওয়া বেশি লতা থেকে ১৫-২০ শতাংশ লতা কেটে ফেলতে হবে এতে খুব তাড়াতাড়ি ফুল ফল জন্মাবে।
চাল কুমরা বা কুমরা জাতীয় সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করে।আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে সবজি চাষের উপায়  গাছে ফুল ধরলে প্রতিদিন ভোর বেলায় হাতের পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেশি হয়। গত মাসে লাউ ও ছিমের চারা রোপন করে না থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

পাট চাষ করার নিয়ম

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায়  সহ পাট চাষ করা যায়। পাটের ফুল আসলে পাট কাটার সময় চলে আসে। এতে আঁশের মান উন্নত হয় এবং ফলনও ভালো হয়। পাট পচানোর জন্য বড় ছোট করে আটি করে পাতা ঝড়ানোর ব্যবস্থা করে পাট জাগ দিতে হয়।যখন পাট পচে যাবে তখন আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে তার মধ্যে ৪০ লিটার পানিতে এককেজি তেঁতুল গুলো তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হয়, এতে পাটের উজ্জ্বলতা বেশি পাওয়া যায়।

যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানো হয়। এভাবে আঁশের মান ভালো হয় আবার পচন সময় কম লাগে। কিন্তু মনে রাখতে হবে পাট কাটার পর পর ছালকরণ করতে হবে, সেটা নাহলে পরবর্তীতে রৌদ্রে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হয়।

বন্যার সম সরাসরি পাটগাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়না। তাই পাটের ডগা বা কা- কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে অতি সহজে বীজ উৎপাদন করা ব্যবস্থা হয়।

বিভিন্ন প্রকার ধানের চাষ বর্ষায় করণী কি

আউশ ধান এসম পাকতে শুরু করে। রৌদ্রউজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াইঝাড়াই করে শুকিয়ে নিতে হবে। বায়ুরোধী জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে । বীজ ধান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হলে লাগসই প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করলে ভবিষ্যৎ ভালো বীজ পাওয়া যায়।

আমন ধান বর্ষায়: শ্রাবণ মাসে আমন ধানের চারা রোপনের একটি ভরা মৌসুম। চারার বয়স যখন ৩০থেকে ৪০দিন হয় তখন জমিতে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের আধুনিক এবং উন্নত জাত গুলো হলো বিআর৩, বিআর৮, বিআর৫, বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, বিআর২৫, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২ ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭,ব্রি ধান৩৯ এছাড়া বিনাশাইল, নাইজারশাইল, বিনাধান ৪ সহ মিনিকেট এগুলো।

উপকূলীয় অঞ্চল যেসব উপযোগী উফশী জাতের ধান রোপণ করা হয় যেমন ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪২, বেই ধান৪৪, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৬২ এইসব জাতের ধান গুলা চাষ করতে পারেন।খরা বা উষ্ণতম এলাকায় নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে আগাম রোপা আমন ব্রি ধান৫৩ ব্রি ধান৫৪ চাষ করতে পারেন। একই সঙ্গে জমির অন্য এক কোণে গর্ত করে পানি জমা রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন।

আমন ধানের ক্ষেত্রে সুষম সার বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে জমির উর্বরতা জন্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত। ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে সার দিতে হবে।

চারা রোপনের ১৩থেকে ১৬ দিন পর প্রথমবার সার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম উপরিপ্রয়োগের ১৬ থেকে ২১ দিন পর দ্বিতীয় এবং তার ১৩ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয় বার ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির ১৬ গ্রামের একটি গুটি ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে চারা লাইন করে রোপণ করতে হয়।পুঁকা রোধের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশ বা ডাল পুঁতে রাখতে পারেন। যাতে কোন পাখি বসতে পারে এবং পোকাগুলোকে ধরে খায়তে পারে।

গাছপালা বর্ষায় পালন করার নিয়ম

 আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় ও গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপনের ব্যবস্থা করতে হবে। সঠিক স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক জৈবসারের সঙ্গে ১০০গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে রেখে দেওয়া লাগবে। সার ও মাটির মিশ্রণে গর্ত ভরাট করে রেখে দেওয়া হবে। দশ দিন পরে গর্তে চারা বা কলম লাগাতে হবে। ভালো জাতের সুস্থ স্বাস্থ্যেবান চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পর গোড়া থেকে মাটি তুলে দেওয়া লাগবে।

প্রাণিসম্পদ বর্ষায় পালন করার নিয়ম

শুষ্ক বা আর্দ্র আবহাওয়া পোলট্রির রোগবালাই বেড়ে যায়। এজন্য সতর্ক হতে হবে এবং এটার প্রতিরোধ ব্যবস্থা করে খামার জীবাণুমুক্ত করণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগ, বায়োসিকিউরিটির জন্য খামারীদের পরিষ্কার জুতা ও এপ্রোন পরে খামারে প্রবেশ করতে হবে এবং বাচ্চাদের বেশি যত্ন নিতে হবে, শেডে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করা, মুরগী বিষ্ঠা ও মৃত মুরগী খামার থেকে দূরে কোথাও মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে। বর্ষা সময় অনেক সময় দেখা যায় পোল্ট্রি খাবার ফিডগুলো জমাট বেধে য়ায় যার কারণে ফিডকে মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে।

বর্ষাকালে হাঁস মুরগী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আফলাটক্সিন এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায় সেই জন্য মুরগী যত্ন বেশি নিতে হয়। এসম সূর্যমুখীর খৈল, সয়াবিন মিল, মেইজ গ্লুটেন মিল, সরিষার খৈল, চালের গুড়া এসব ব্যবহার করা ভালো হয়। সুপ্রিয় পানি ব্যবহার করতে হবে এতে পশুপাখির রোগ বালায় হবে না।

মৎস্যসম্পদ বর্ষায় লক্ষ কেমন দেখা যায়

পুকুরের চারা মাছ ৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার পরিমাণ বড় হলে মজুদ পুকুরে ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে আগের বছর মজুদ পুকুরে মাছ বিক্রি করে দিতে হবে।
পানি বেড়ে যাওয়া কারণে পুকুর থেকে যেন মাছ বাইরে বেড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এজন্য পুকুরে পার বাঁধায় করে নিতে হবে উঁচু করে। আবার জাল দিয়ে ও মাছ আটকে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যখন পানি বৃদ্ধি পায় তখন মাছের খাবার পেতে ও সমস্যা হয় যার কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবারহ করতে থাকতে হবে নাহলে খাদ্য অভাবে মাছ মারা যাবে পচে যাবে পানি দূষিত হবে। মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে দেখতে হবে।

শেষ কথাঃ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় 

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের সবজি চাষের উপায় সম্পর্কে ও পাট চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে খুব সন্দর ভাবে বুঝতে পেরেছেন। আষাঢ় মাসে কি সবজি পাওয়া তা আপনারা জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, নিশ্চয়ই এই পোস্ট আপনার অনেক উপকারে আসবে। আজ এই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোড়ন আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url